শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
বহুবিবাহ ও ইসলাম পর্বঃ ১
এ এইচ এম মহিউদ্দিন ঃ
ইদানিংকালে ছাত্র ছাত্রীদের “নারীর অধিকার-ইসলাম ও অন্যান ধর্মের দৃষ্টিভংগি” এ নিয়ে আলোকপাত করছি, করতে হচ্ছে। আমার একাডেমিতে পড়ুয়া কিছু ইসলাম বিমুখ অনেকটা স্যাকুলার ভাবাদর্শের ডিগ্রি লেভেলের সাবেক বর্তমান ছাত্রীদের অনেক প্রশ্নের উত্তর খঁজতে স্টাডি করতে হচ্ছে। ইসলাম কেন একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয় এবং কোন পটভুমিতে সে অনুমোদন ছিল, আজ তাহা স্বল্প জ্ঞানে আলোকপাতে ব্রতী হলাম। ইসলাম পূর্ব আরব সমাজ ব্যবস্হা ছিল নারীদের জন্য চরমভাবে অমর্যাদার, দাসত্বের। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে, নানান ধর্মে নারীদের সামাজিক জীব হিসেবে বিবেচনা করতে কুন্ঠিত ছিল। কোন কোন ধর্ম বলছে- “নারী হচ্ছে শয়তানের
প্রতিনিধি, আবার কেউ বলছে অভিশাপ” কেউ নরকের দার বলে ঘোষনাই দিয়ে দিয়েছে। যাহা আমরা প্রাচীনকালে নারীদের বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিভংগি কি ছিল এমন শিরোনামে তালাশ করলে পেয়ে যাব। এখন বিষয় হচ্ছে ইসলাম কেন একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়..?
হ্যাঁ, ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়। একাধিক বিয়েতে উৎসাহ দেয় না। কোরানের যেই আয়াতকে আমরা ২-৩-৪ বিয়ের পক্ষে দলীল হিসেবে ব্যবহার করি, সে আয়াতে স্ত্রী গ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা ৪ পর্যন্ত নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আর এই আয়াত এমন এক সময় অবতীর্ণ হয় যখন একেকজনের ৮-১০জন করে স্ত্রী থাকতো। এমনকি শতাধিকও ছিল। স্ত্রী গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমা বা নিয়ম ছিল না। ইসলাম এই ব্যাপারটাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনে, কিছু নিয়ম শর্ত বেঁধে দেয়। কিন্তু আমরা সেই আয়াতকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করি যেন ইসলাম ২-৩-৪ বিয়েতে উৎসাহিত করে।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে; এতীম ও বিধবাদের পুনর্বাসনের জন্যেই এই আয়াত নাযিল হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ যুদ্ধ চললে ঐ সমাজে এতীম ও বিধবার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই বিধবা নারীদের ও এতীমদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বহু বিবাহের অনুমতি দিয়েছেন।
একবার এক লোক ইসলাম গ্রহণ করে যখন তার ১০জন স্ত্রী ছিল। রাসুল সাঃ তাকে বললেন, এদের মধ্য থেকে ৪জন রেখে বাকিদের মুক্ত করে দাও। এবং আয়াত অবতীর্ণের পর সাহাবাদের ক্ষেত্রেও রাসুল সাঃ’র একই নির্দেশ ছিল, সর্বোচ্চ ৪জন রেখে বাকিদের মুক্ত দাও। অর্থাৎ আরবের তৎকালীন সময়ের জন্য এই আয়াত ছিল বহুবিবাহ কমানোর পক্ষে। আর আমাদের বর্তমান সময়ে সেটা হয়ে গেছে একাধিক বিয়ের পক্ষে!
সুরা নিসার সেই একই আয়াতে পরের অংশে আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা তাহাদের মাঝে সুবিচার করতে পারবে না বলে ভয় পাও, তাহলে একজন স্ত্রী গ্রহণ করবে। মানে- একাধিক স্ত্রী গ্রহণের শর্ত হচ্ছে, স্ত্রীদের মধ্যে পুরোপুরি সুবিচার রক্ষা করতে হবে। খাওয়া, পড়া রাতে থাকা, ব্যয়ভার সবদিক থেকে। যদি কেউ ভয় পায় যে সে হয়তো এই সুবিচার রক্ষা করতে পারবে না, তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম। দলীল সেই একই আয়াত। রাসুল সাঃ বলেছেন, যার দুজন স্ত্রী এবং একজনকে অন্যজনের উপর অগ্রাধিকার দেয়, সে কেয়ামতের দিন তার ঝুঁকে পড়া এক পাশ টানতে টানতে উপস্থিত হবে।কি ভয়াবহ!
এই সমস্ত কথার উত্তর আল্লাহ একই সুরার ১২৯ নং আয়াতে দিয়েছেন- তোমরা শত চাইলেও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার ও ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হবে না। অতএব কোনো একজনের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়া পরিহার করে চলো।
এখন কথা হচ্ছে এত সতর্কতা সাবধানতার পরেও ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি কেন রাখলো? উত্তর হচ্ছে, এই অনুমতি যদি না থাকতো সেটা হয়তো কারো জন্য অমানবিক আবার কারো জন্য সমস্যার কারণ হতো। যেমন, কোনো পুরুষ চাচ্ছে তার বংশবৃদ্ধি হোক কিন্তু তার স্ত্রীর কোনো জটিলতা রয়েছে। এমতাবস্থায় ঐ স্ত্রীর জন্য সম্মানজনক যে তাকে বাদ না দিয়ে বরং সসম্মানে রেখে সমান অধিকার দিয়ে তার স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করবে। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ সন্তান না হওয়া মেনে নিয়ে এক স্ত্রী রাখতে চায় ইসলামের এখানে কোনো বাঁধা নাই। ইসলাম শুধু অনুমতিটুকুই রেখেছে। এভাবে জাতীয় যুদ্ধে বা স্বাভাবিক ভাবে নারীরা বিধবা হয়ে গেলে যখন তাদেরকে বিয়ে করার মতো পুরুষ খুঁজে পাওয়া যায় না বা বিবাহ বিচ্ছেদে কোনো নারী একা হয়ে পড়লে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তার অভিভাবকত্ব গ্রগণ করা, সমাজে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, কোনো পুরুষের যৌন শক্তি, আবেগ- উত্তেজনা প্রবল আর অপরদিকে স্ত্রী অনাগ্রহী, এমন অবস্থায় যেন সে কোনো অনৈতিক সম্পর্কে না জড়িয়ে সমান অধিকার দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে, এমন আরো অনেক যৌক্তিকতায় ইসলাম একের অধিক চার পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি রেখেছে। তবে এর সবটাই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে।
অর্থাৎ ইসলামে চার বিয়ের অনুমতি রেখেছে শুধু সমস্যার সমাধানের জন্য। আর ৪ সংখ্যা দ্বারা ইসলাম বিবাহের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছে। এই অবস্থাটা আরো ভালো বোঝা যাবে যদি আরবের তৎকালীন সময়টা চিন্তা করা হয়, যেখানে শতাধিক স্ত্রী গ্রহণেও কোনো নিষেধ ছিল না, ছিল না কোনো নিয়ম-কানুন বা শর্ত। তবে যদি সমস্যা তৈরির সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ-একজন স্ত্রী গ্রহণ করবে।
সৃস্টির তরে স্রস্টার বিধান সর্বদাই কল্যাণকর।
লেখকঃ
এ এইচ এম মহিউদ্দিন
প্রভাষক ইংরেজি (অতিথি) সেনবাগ সরকারী কলেজ।
এনায়েতপুর সিনিয়র রহমতিয়া সিনিয়র মাদরাসা